ডিবুক বাক্স

10:10 AM





#এক

-         কত দেবো ঠিকঠাক করে বলুন তো ?
-         বাবু জিনিষটা তো দেখলেন, বলুন এমন কি বেশী চেয়েছি ? খাসা জিনিষ
-         খাসা না ছাই, কে নেয় এরকম পুরানো বাক্স? নেহাত কারুকাজটা চোখে লেগে গেছে।
-         ঠিক কয়েছেন কত্তা, এ জিনিষ সবার চোখে ধরা দেয়না
-         হয়েছে হয়েছে আর তেল না দিলেও চলবে, ২০০-র এক পয়সাও বেশী দিতে পারব না , দিতে হলে দা, না হলে যাও বাপু
-         বেশ তবে তাই দিন, অনেক লস হয়ে গেলো গো বাবু

নাহ জিনিষটা কিন্তু মন্দ নয়, দামের তুলনায় বেশ ভালোই। মাথার কাছের ওয়াল আলমারিটায় রেখে দিতে হবে, সবার চোখে পড়বে বেশ। তার আগে ভেতরে কিসব জঞ্জাল রয়েছে, ওগুলো পরিষ্কার করতে হবে, যাই কলিন আর একটা ন্যাকড়া নিয়ে আসি ।

#দুই

লম্বা একটা রাস্তা,দুপাশটা ধু ধু করছে। অদ্ভুত ব্যপারটা হল, শুধু রাস্তাতেই আলো, আর বাকিটা অন্ধকার,আমি হেঁটে চলেছি, রাস্তাতেও কোনও মানুষজন নেই।
ভয়-ডর আমার চিরকালই একটু কম, তাই প্রথমে পাত্তা দিইনি, কিন্তু হঠাৎ কিরকম একটা সোঁ সোঁ শব্দ ভেসে এলো, আর তার সাথে সাথে অদ্ভুত ভাবে চারপাশটা ক্রমশ ছোটো হয়ে আসতে লাগলো, যেন একটা বিন্দুতে এসে মিশে যাবে সব। আমি পাগলের মত দৌড়াতে লাগলাম। রাস্তার শেষপ্রান্তে একটা ফটক দেখা যাচ্ছে, ওটা পেরিয়ে গেলেই বোধহয় সব শান্ত হয়ে যাবে। প্রায় পৌঁছে গেছি ফটকের দোরগোড়ায়, এমন সময় হঠাৎ পেছন দিক থেকে দুটো কালো রোমশ হাত এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল, আমি চিৎকার করে উঠলাম, আপ্রাণ চেষ্টা করছি, কিন্তু সেই হাত দুটোর হাত থেকে যেন আর মুক্তি নেই, এদিকে পেছন দিকের অন্ধকারটা আরও এগিয়ে এসেছে, আর একটু হলেই যেন আমাকে গিলে নেবে.........নাহহহহ।
-         কিরে স্বপ্ন দেখছিস নাকি, সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি, আর কতক্ষণ ঘুমাবি? যা বাজার যা।
ধুত্তেরি, একে রবিবারের সকাল, তার ওপরে এরকম একটা বিচ্ছিরি স্বপ্ন,কোনও মানে হয়? মুডটাই নষ্ট করে দিলে।
-         যাচ্ছি, আগে এক কাপ কড়া করে কফি দাও তো মা

#তিন

আজ রোদটা বেশ চড়া, বাইকের হাওয়ায় গাটা যেন ঝলসে যাচ্ছে। রাস্তা  ফাঁকা ,বেশ স্পিডেই চালাচ্ছিলাম,বাঁদিকের মোড় ঘুরলেই, বাড়ির গলি......
আরে একি, এই রাস্তাটা কেমন অচেনা অচেনা ঠেকছে। শিরদাঁড়া বেয়ে একটা হিমেল স্রোত বয়ে গেলো,মনে পড়েছে, এটা সেই কালকের স্বপ্নে দেখা রাস্তাটা, ঠিক আগের মতই হঠাৎ করে চারপাশটা অন্ধকার হয়ে এলো। এক অজানা আতংকে দিকবিদিক জ্ঞ্যান শূন্য হয়ে আরও জোরে এক্সিলেটর চেপে ধরলাম, গোঁ গোঁ করে বিকট আওয়াজ হতে থাকলো বাইকটায়...
-         আরে গেল গেল ধর ধর ।।
-          ভাগ্যিস প্রফেসর সোম ঠিক টাইমে গাড়ীতে ব্রেক মেরে দিয়েছিলেন, নাহলে যে কি হত।
-         আজকালকার ছেলে-ছোকরাগুলোও হয়েছে, বাইক হাতে পেলো না কি নিজেকে হাওয়াই জাহাজ মনে করে।
চারপাশ থেকে ভেসে আশা টুকরো টাকরা উত্তপ্ত মন্তব্যে যখন হুঁশ ফিরল, খুব বেশী বুঝতে না পারলেও এইটুকু বুঝলাম, যে আমি কোনও প্রফেসর সোম নামক ব্যাক্তির গাড়ির ওপর নিজের বাইকটা তুলে দিয়েছি এবং উনি আগের থেকে বুঝতে পেরে, ব্রেকখানা না চাপলে আমার আজ ভবলীলা সাঙ্গ হত।
-         তোমার বিশেষ লাগেনি তো ? আরে Young Man গাড়ীর ক্ষতি নিয়ে ভেব না, ওটা আমার ওপর ছেড়ে দাও, তুমি নিজে হাঁটতে পারবে তো? নাকি ড্রাইভার কে বলি পৌঁছে দিয়ে আসবে?
এতটাও সহনাভুতি আশা করিনি, কিছুক্ষন অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম ভদ্রলোকের মুখের দিকে, প্রায় ৬ ফুট লম্বা মধ্যবয়সী,ব্যাকব্রাশ করা কাঁচাপাকা চুল, আর মুখে শান্ত একটা হাসি।
-         নানা আমার একদমেই লাগেনি, মাঝখান দিয়ে আপনার গাড়ীটার ...
-         ওসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা, তোমাকে খুব Disturbed  লাগছে, বাড়ি যাও রেস্ট নাও সব ঠিক হয়ে যাবে।।
-         এই গলির শেষ দোতলা বাড়িটাই আমার, প্লিজ আপনি একবার যাবেন কিন্তু।
-         বেশ সে হবে খন, তুমি এখন বাড়ি যাও, আর ডাক্তার দেখিয়ে নিও ।।
বেরিয়ে যান ভদ্রলোক, আশেপাশের লোকেরাও হতাশ হয়, এত সহজে সব মিটে যাবে, কেউ ভাবতে পারেনি, আমিও বাইকটা ঠেলতে ঠেলতে বাড়ির দিকে রওনা দিই, জোর বেঁচে গেছি, বাইরে বুঝতে না দিলেও, ভেতরে বেশ ছড়ে গেছে চারপাশ, যন্ত্রণা করছে ভালোই ।।

#চার

এই ভর সন্ধেবেলা বিছানায় শুয়ে থাকতে কার ভালো লাগে বলুন?
কিন্তু কি করা যাবে, তিনদিন টানা রেস্ট, এটা ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপ্সন।।
দু মাস ‘ওসব’ ছাইপাঁশ গেলা যাবেনা, পেটগরম থেকে এইসব হ্যালুসিনেসন, এটা বাবার  প্রেস্ক্রিপ্সন।।
আর সত্যনারায়ণ পূজা, এটা মায়ের সলিউশন......সব মিলিয়ে রীতিমত অস্থির, কিন্তু এই সবের ওপরে যেটা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে, ঐ স্বপ্ন বলুন আর হ্যালু বলুন, কোনও কার্য্য-কারন খুঁজে পাচ্ছিনা , কেউ বিশ্বাস না করলেও আমি নিজে জানি , রিসেন্ট কোনও অপদ্রব্য সেবন আমি করিনি, তবে?
- আসতে পারি ?
- আরে আপনি, আসুন আসুন।।
- বিরক্ত করলাম না তো, ভাবলাম কেমন আছো একবার খোঁজ নিয়ে আসি,যা জোরে ঠুকেছিলে ।।
- আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেব, আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে, কিলিয়ে কাঁঠাল পাকিয়ে দিত ।।
- আবার ওসব কথা কেন?আচ্ছা তোমার মা বাবার সাথে আগেই হয়ে গেছে এবার তোমার সাথেও পরিচয়টা সেরে ফেলি, আমি রুদ্র সোম, ফিজিক্সের প্রোফেসর ছিলাম, কর্মসূত্রে বাইরে থাকতাম, আপাতত অবসর জীবন এই কোলকাতাতেই, তোমাদের গলির ২ টো গলি পরেই আমার বাড়ি।।
তা ভায়া, মুখ চোখে ওরকম ভয় নিয়ে বাইক ছুটিয়ে ছিলে কেন ?? কেউ তাড়া করেছিলো নাকি ?
-         না আসলে, কিভাবে যে বলব, যাকেই বলছি সেই পেট গরম হয়েছে বলে হেসে উড়িয়ে দিচ্ছে ।।
-         আমাকে নির্ভাবনায় বলতে পারো ইয়ং ম্যান......আরে ওটা কি ? কি সর্বনাশ এ জিনিষ কোথা থেকে জোটালে ?
-         এক ফেরিওয়ালা সস্তায় দিয়ে গেল ,আমিও নিয়ে নিলাম, দেখতে বেশ ভালো কি বলুন ?
-         হ্যাঁ ভালো তো বটেই, তা এটা খোলা টোলা হয়েছে নাকি ?
-         হ্যাঁ পরিষ্কার করেছিলাম বটে একবার ।।
-         বুঝেছি, তা ভায়া এটা কি জিনিষ জানো ?
-         সামান্য একটা কাঠের বাক্স, এটা ছাড়া তো কিছু বিশেষত্ব নজর পড়েনা ।।
-         হুম তা বটে, বাইরে থেকে দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই, এটাকে বলে  Dybbuk Box, ইহুদীরা এটা ব্যাবহার করত, সম্ভবত হলোকাস্টের কোনও দুর্ভাগার অভিশাপ এটায় বেঁধে রাখা হয়েছিল, ফলে বাক্স যার হাতে পড়ত, মালিকের দুর্গতির সীমা থাকত না, দুঃস্বপ্ন দিয়ে শুরু, আর মৃত্যু দিয়ে শেষ।। কি, খুব গাঁজাখুরি বলে মনে হচ্ছে তাইনা, ভাবছ একজন ফিজিক্সের লোক এরকম বলে কিকরে ? তা তোমরা তো ইন্টারনেট যুগের মানুষ, Dybbuk Box   বলে একবার সার্চ মেরেই দেখনা কি বেরোয়।।
‘নানা আসলে মাথাটা এমন ঘুরে গেছিল’,শুকনো হাসি হেসে পরিবেশটাকে স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু কাল থেকে যা ঘটে চলেছে সত্যিই তো কোনওটাই তো স্বাভাবিক নয় ।।
-         আরে বাবা তোমার জায়গায় আমি থাকলে, আমিও একই ভাবতাম, শুনে রাখ ভায়া, আজ যেটা অজানা অলীক, কাল জানা হয়ে গেলেই কিন্তু সেটা বিজ্ঞান,তাই না? যাকগে অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে, ব্যাপারটাকে আর বাড়তে দেওয়া ঠিক হবেনা, কিছু প্রসিডিউর আছে, তুমি ভেবনা, আর কিছু হবেনা , আমি এটা নিয়ে গেলাম, তা আপত্তি নেই তো ?
উত্তর দেওয়ার মত অবস্থায় আমি ঠিক ছিলাম না, মানা না মানার এক অদ্ভুত দোলাচলে দুলছিলাম,মাথা নেড়ে সায় জানালাম ।।
-         তোমার মাকে বোলো আর একদিন এসে কফি খেয়ে যাবো, এটার ব্যাবস্থা আগে করে আসি কেমন? আর হ্যাঁ, চিয়ার আপ ইয়ং ম্যান অত ভেব না, সব ঠিক হো জায়েগা......আমার কার্ডটা রাখো, দরকার হলে যোগাযোগ করবে, এখন আসি কেমন ।।
যেমন ধূমকেতুর মত এসছিলেন ভদ্রলোক , তেমন ভাবেই চলে গেলেন, আমি থ মেরে বসে রইলাম ।।      

#পাঁচ

তিন দিন কেটে গেছে, না আর কোনও দুঃস্বপ্ন কিম্বা দুর্ঘটনা কোনোটাই আর ঘটেনি , সেটা সত্যনারায়ণের সিন্নির জোরেই হোক কিম্বা প্রফেসরের  Dybbuk Box  বিদায়ের মধ্য দিয়েই হোক ।।
যাই হোক, ভদ্রতার খাতিরেই,অন্তত একবার ফোন করা দরকার,মানুষটা নিজে এসে খোঁজ নিয়ে গেছিলেন, কার্ডটাতো আছেই ।।
-         হ্যাঁ, প্রোফেসর সোম, আমি কৌশিক বলছিলাম, নাহ আর কোনও ঘটনা ঘটেনি... আচ্ছা তাহলে আগামী রবিবার যাচ্ছি তাহলে, বেশ বেশ রাখলাম তবে ।।
ভদ্রলোক কি মন পড়তে পারেন নাকি, যাওয়ার ইচ্ছে একটা ছিলই, তা নিজের থেকেই নেমন্তন্ন করে দিলেন , ভালোই হল।।
   নাহ,জটায়ুর ভাষায় বলতে গেলে, প্রোফেসর সোম মানুষটা কিন্তু হাইলি সাসপিশাস, কালটিভেট করে দেখতে হবে, আর কিছু না হোক, আমার গল্পের অনেক মাল মশলা পাওয়া যাবে ওনার কাছে আশা করি ......।।

You Might Also Like

0 comments