মায়াকানন
9:15 AM#এক
শনিবার অবধি আর তর সইছিলো না, বিকেল হতে না হতেই দৌড় দিলাম প্রফেসর সোমের বাড়ি। দোতলা ছিমছাম বাড়ি, কলিং বেল টিপলাম ,এক কমবয়সী ছেলে এসে দরজা খুলে দিলো।।
- আসুন, ভেতরে এসে বসুন, বাবু আসছেন ।
বসলাম, নাহ ভদ্রলোকের স্টাডি রুমের প্রশংসা করতে হয়,রীতিমত একটা ছোটখাটো লাইব্রেরী, তলার দিকের তাকগুলোতে সূর্যের আলো পৌঁছায় কিনা কে জানে ।।
- সরি সরি, অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলাম,আসলে সন্ধ্যের দিকে একটু মেডিটেশনের বদঅভ্যাস আছে কিনা।।
- আরে নানা, আপনার বইয়ের কালেকশান দেখছিলাম,বিশাল তো ।।
- ও হ্যাঁ, তা আছে বটে, তবে এদিক ওদিক নাড়াচাড়া করতে গিয়ে অনেক হারিয়ে গেছে, দাঁড়াও একটু কফি-টফি বলে আসি ।।
দেওয়ালে একটা বড় পেন্টিং ঝোলানো, কাছে গিয়ে দেখলাম সেই ৮০-এর দশকের রেট্রো মার্কা পোশাক পরিহিত ১০-১২ জন যুবক-যুবতী,ছবির তলায় লেখা ‘ইন্ডিয়ান প্যারানরমাল সোসাইটি ১৯৮০’ ,মাঝখানে দাঁড়ানো সেদিনের কম বয়সী প্রোফেসর সোম কে চিনতে অসুবিধা হলনা, কিন্তু ওনার গলায় ওটা কি ?
- হুম, ঠিকই ধরেছো, আমার পুরো নাম কিন্তু রেভারেন্ড রুদ্র সোম, অবাক হলে নাকি ভায়া, ঐ যে নামটি দেখলে,ওটার অন্যতম ফাউন্ডার আমিও,ওদের এক খানা ওয়েবসাইটও আছে,ওখানে ঢুকলেই সব নীরস তথ্য জানতে পারবে, কি বোর হচ্ছো নাকি ইয়ং ম্যান ?
- আরে নানা, আপনার মত ব্যাস্ত মানুষ যে আমাকে টাইম দিয়েছেন, এটাই অনেক ।।
- ব্যাস্ত ছিলাম আগে, এখন মানুষ এত পলিটিকালি অ্যাবনর্মাল, যে ওসব প্যারানর্মাল-ট্যারানর্মাল সব আণুবীক্ষণিক হয়ে স্রেফ গেজুড়ে গপ্প হয়ে গেছে।।
মাথা নেড়ে হাল্কা এসে নীরব সম্মতি জানালাম ।।
- তা লেখালেখি কর নাকি ভায়া?
- বড় কিছু না, ঐ একটা ব্লগ মত আছে ।।
- বেশ তো, বিন্দুতেই তো সিন্ধু হয় একদিন, তা বলো কি জানতে চাও।।
- কিভাবে এসব শুরু হল, মানে আপনি কিভাবে এই লাইনে এলেন, মাফ করবেন লাইন কথাটা ব্যাবহার করা উচিৎ হয়নি ।।
- আরে নানা ঠিক আছে, যেচে কে আর এসবে আসতে চায় বলো,আসলে সবাইকে বলতে চাই না , কিন্তু তুমি অলরেডি কিছুটা হলেও এ স্বাদের ভাগ পেয়েছো, ওয়েট কফিটা আসুক শুরু করছি ।।
#দুই
- তখন কত বয়স হবে আর, গ্র্যাজুয়েশন করে বসে রয়েছি, চুটিয়ে টিউশানি করছি,গুলতানি আর বিন্দাস রোয়াকে আড্ডা, বনেদী পরিবার ,পারিবারিক বিজনেস, চাকরী-বাকরী নিয়ে চাপ নেই, হঠাৎ একদিন আমার নামে চিঠি।অবাক হলাম, আমার মত বেকার লোককে কে আবার রেজিস্ট্রি করে চিঠি পাঠাবে ?
খুলে মনটা খারাপ হয়ে গেলো , ছোটো কাকার চিঠি।সারমর্ম এটাই যে, এই চিঠি যখন আমি হাতে পাবো,তখন উনি আর নেই,আমি যেন গিয়ে ওনার স্থাবর-অস্থাবরের দায়িত্ব নি ।।
- এত লোক থাকতে আমাকেই বা কেন? কি, এই প্রশ্নটাই মাথায় আসছে তাই তো?
- এর জন্য ছোটকাকার ব্যপারে একটু বলতে হয়, বিশাল বড় ইতিহাস, অত গভীরে গিয়ে লাভ নেই , শুধু এটুকু জেনে রাখো তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোটকাকা ছিলেন সব থেকে ব্রিলিয়ান্ট, তাই সব বাড়িতে যা হয় আর কি, বাবা জেঠারা দাদুর ব্যাবসাতে ঢুকতে বাধ্য হলেও বাড়ির ছোট ছেলের পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল। কিন্তু ছাড়টা বোধহয় একটু বেশীই হয়ে গেছিলো , বিদেশে গেছিলেন ডাক্তারি পড়তে,কতটা কি পড়েছিলেন জানিনা, তবে বছর চারকে পরেই ফিরে পড়েছিলেন আবার একা না এক মেমসাহেব কে সাথে নিয়ে, তখনকার সময়, গোঁড়া বনেদী পরিবার, ব্যাপারটা কিরকম দাঁড়ালো বুঝতে পারছ তো? যদিও তখন আমি সদ্য কিশোর, তাই বেশী কিছু বুঝলেও এটুকু বুঝেছিলাম ,বাবা জ্যাঠারা চেষ্টা করেছিলো দাদু আর কাকার মধ্যে একটা মিটমাট করানোর চেষ্টা করেছিলেন , কিন্তু ভবি ভোলার নয়, দাদু ছোটকাকাকে ত্যাজ্যপুত্র করে দিলেন। শুনেছিলাম উনি বিদেশ ফিরে গেছিলেন,ওনার সাথে সেই থেকে আমাদের সাথে আর কোনও সম্পর্ক ছিলনা।।
#তিন
হাওড়া থেকে চেপে বসলাম ট্রেনে,খড়গপুর লাইনে গন্তব্য রাধামোহনপুর,বাড়ির বড়রাও বলল, হাজার হোক রক্তের সম্পর্ক, শেষ ইচ্ছের প্রতি সম্মানটুকু জানানো কর্তব্য।।
আর এমনিতেও ছোটকাকার প্রতি একটা দুর্বলতা আমার ছিলই,ব্রাম স্টোকার টু বার্নারড শহ, জুলে ভার্ন টু জুলিয়াস সীজার,শরৎবাবু টু সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ সবার সাথে পরিচয় কাকার ঘরে জমানো গোপন বইয়ের তাক থেকেই, তাই হয়ত কাকাও তাঁর শেষ ইচ্ছেটা...... যাকগে বাকি যাত্রা পথ কিম্বা কিরকম জনহীন স্টেশনে নামলাম,তারপর কি ভয়ঙ্কর প্রচেষ্টায় এক খানা গরুর গাড়ি ধরে কি কষ্টে কাকার চিঠিতে বলা গ্রামে পৌছালাম, সেসব বর্ননা করে তোমাকে বোর করব না, শেষ অবধি পৌছালাম।।
প্রত্যন্ত গ্রাম, অধিকাংশ চাষের মাঠ, আধঘন্টা ছাড়া ছাড়া ৪/৫ বাড়ি মিলে এক একটা জনপদ, কাকা এরকম পাণ্ডববর্জিত জায়গায় এসে কেন বাড়ি করল মাথায় ঢুকছেনা ।।
গরুর গাড়ি যেখানে নামালো সেটা একটা বটতলা,সন্ধ্যা প্রায় আসন্ন,কিছু বয়স্ক মানুষের জটলা, প্রাত্যাহিক আড্ডা মনে হচ্ছে ।।
- ওটা কে বটে?
- শহর থেকে এলেন বুঝি ?
- তা কাকে খুঁজছেন ?
একের পর এক অনুসন্ধিৎসু চোখের প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে লাগলাম,আর সেটা স্বাভাবিকও, এই আদিমপুরে যেচে কেউ কেন আসতে চাইবে ।।
- আজ্ঞে আমার নামে রুদ্র সোম, আসছি কোলকাতা থেকে, আমি স্বর্গীয় ডাক্তার বীরেন্দ্রনাথ সোমের ভাইপো ।।
- ও তুমি ডাগতার বাবুর ভাইপো, আহা আগে বলবে তো, এই কেউ মোড়া নিয়ে আয়, গেলাসে করে জল নিয়ে আয়, আহা এখানে আসতে বাছার বড় কষ্ট হয়েছে গা , বড় ভালো মানুষ ছিলেন গো ডাগতার বাবু, আমাদের বড় ভালবাসতেন ,
কি থেকে যে কি হয়ে গেলো, শেষ সময়ে উনি বলেছিলেন তুমি আসবে,তা আজ রাতে তো সে বাড়ি যেতে পারবেনি, আমাদের ঘরেই
একটু কষ্ট করে কাটিয়ে দাও বাবা ।।
- আজ্ঞে মাফ করবেন আমার হাতে বেশী সময় নেই,দুদিনের মধ্যেই ফিরে যেতে হবে, চিঠিতে নবীন মাস্টারের বাড়িতে যাওয়ার কথা উনি লিখেছিলেন ...।।
"দাঁড়াও একটু মগজে ধোঁয়া দিয়ে নি, অনেকদিনের পুরানো স্মৃতি তো" এই পর্যন্ত বলে থামলেন প্রফেসর সোম, গোল্ডফ্লেকের গন্ধে ঘরটা ভরে উঠলো ।।
আমাকেও অফার করেলেন , ভদ্রতার খাতিরে না বললাম।।
- সিগারেটের আবার ছোট বড় কি হয়ে ভায়া, তা যাকগে, কোথায় ছিলাম যেন, ওহ নবীন মাস্টারের বাড়ি, ভদ্রলোকের বাড়ি দোতলা মাটির বাড়ি, আমাকে পেয়ে কি যে করবেন ঠিক করে উঠতে পারছিলেন না ।।
- বাবা, তোমাকে যে কি বলব, আসলে বীরু যে আমার কি পরিমাণ কাছের বন্ধু ছিলো, আসলে মানুষজন খুবই কম এখানে, লোকজন ভালো হলেও, সব চাষা-ভুসো ,কথা বলার জন্যও তো একটা ঠিকঠাক লোকের দরকার, বীরু আর আমি সেই লোক ছিলাম, শালা আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেলো ।।
যাকগে, এই নাও বাবা তোমার দলিল-দস্তাবেজ এবারে তুমিই সামলাও, বীরু তোমাকে দিতে বলে গেছিলো, আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলুম, তা আজকের রাতটা কষ্ট করে হলেও তোমাকে এখানেই কাটাতে হবে বাবা ,কাল সকালে তোমাকে লোক দিয়ে সে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবখন, তুমি তোমার মত করে সব দেখে নিও, আর হ্যাঁ, খাবার-দাবার নিয়ে একদম ভেবনা, রোজ পৌঁছে দিয়ে আসবে আমার লোক ।।
- এ বাবা নানা মাস্টার মশাই, আপনি এত করছেন, আবার ওসব কেন? আমার অভ্যাস আছে রান্না করার, আমি নিজেই দুটো ফুটিয়ে নিতে পারবো।।
- বেশ তুমি যখন কিন্তু কিন্তু করছ, তোমাকে করতে হবেনা, আগে যে লোক তোমার কাকার কাছে কাজ করত, তাকেই খবর দিচ্ছি, লোক খুব ভালো, সব করে দেবে, তবে একটা কথা বাবা, রাতে কিন্তু কেউ থাকবেনা, ঐ একটাই সমস্যা ছিল তোমার কাকার সাথে......ইয়ে দেখ দেখি, তোমাকে শুধু মুখে কতক্ষণ বসিয়ে রেখেছি, দাঁড়াও দেখে আসি, গিন্নীর রান্না কতদূর ।। কিছু যেন একটা
চেপে গেলেন ভদ্রলোক, আমিও আর ঘাঁটালাম না।।
#চার
মায়াকানন,কাকার বাড়ির নাম,পেল্লাই দোতলা মার্বেল বাড়ি, চারপাশ উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা, ভেতরে বাগান,বেশ পরিশ্রম দিয়ে সাজানো ।।
এই পাণ্ডব-বর্জিত জায়গায় কাকা কেন এরকম পেল্লাই বাড়ি ফাঁদতে গেলেন এটা মাথায় না ঢুকলেও , কেন রাতে কেউ আসতে চায়না সেটা ভালোই বুঝতে পারলাম, মূল গ্রাম থেকে হাঁটা পথে এখানে আসতে প্রায় ২৫ মিনিট, মাঝে আবার পুরোটাই জঙ্গল।।
সঙ্গে যে লোকটি এসেছে তার নাম শম্ভু, সে কাকার আমলের লোক না হলেও, এ বাড়িতে আগে মাঝে সাঝে কাজ করেছে, পয়সা কড়ি-খাবার দাবারের চাহিদা খুব বেশী না থাকলেও, দাবী একটাই...
“সন্ধ্যের পর বাবু আর থাকবনি, পর দিন ভোরে আবার আসুম", আমিও আর অমত করিনি ,সারাজীবন হোস্টেল আর মেসে কাটিয়েছি এখানে ওখানে , রাতে এই নির্জনপুরীতে একা কাটাতে আমার খুব বেশী অসুবিধা হবেনা ।।
ঘর-দোর এমনিতে পরিষ্কারই ছিল, তাও শম্ভু বেশ ঝেড়েঝুড়ে দিলো চারপাশ, আর ভেতরের বর্ণনা আর কি দেব ভায়া, একজন এক মানুষের যে থাকার জন্য এত কিছু লাগতে পারে, তা না দেখলে জানতে পারতাম না, পুরো বাড়ি জুড়ে দামী আসবাবপ্ত্র, ওয়াল পেন্টিং ,
শো পিস... মানে মোটামুটি ধরে নাও ছোটখাটো পুরানো জমিদার বাড়ি, কাকা শেষ জীবনটা বেশ রসে-বশেই কাটিয়ে ছিলেন বোঝা যায়, কিন্তু একা একা কিভাবে ? যাকগে সে পরে ভাবা যাবে, আপাতত শম্ভুর হাতের রান্না টেস্ট করে একটু গড়িয়ে নেওয়া যাক, পরে বাকি বাড়িটা আর চারপাশও ভালো করে দেখতে হবে ।।
সন্ধ্যে তখন হয় হয়, শম্ভু চলে গেছে, আমিও দোতলার পূব দিকের একটা ঘরের বিছানায় গুছিয়ে বসেছি,হ্যাজাক জ্বলছে। দলিলপত্র গুলো একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া দরকার, আরে ওটা কি, রীতিমত দস্তা দিয়ে সীল করা মুখবন্ধ একটা খাম, আবার কাকার চিঠি, দেখা যাক এবারে উনি কি লিখে গেছেন।।
‘স্নেহের রুদ্র,
এই চিঠি যখন তুমি পাবে তখন আমি আর থাকবনা,তুমি জানো আমাদের পরিবারের মধ্যে তুমিই একমাত্র ক্লোজ ছিলে তাই তোমার ওপরে এক গুরু দায়িত্ব আমি দিয়ে যেতে চাই,বাড়ী জমি জায়গা এসব নিয়ে আমি ভাবিনা, ওগুলো তুমি যা ভালো বুঝবে করবে, আমার স্টাডিরুমের লাইব্রেরীর একদম মাঝের তাকে একটা গোপন কুঠুরি আছে, ওটার মধ্যে কিছু আমার ডায়রী আর বই রয়েছে, ওগুলো তোমাকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে, হয়ত অবাক হচ্ছ আমি কেন নিজেই করে ফেলিনি এতদিন, আসলে পারিনি মায়াকাননে জড়িয়ে গেছিলাম, কিন্তু তোমাকে পারতে হবে বাবা, শুধু এইটুখানি জেনে রেখো ওর সাথে তোমার কাকার সম্মান জড়িয়ে আছে , আর হ্যাঁ শেষ করার আগে আবার সাবধান করে দিলাম,তুমি ভুলেও ওগুলো যেন কোনোভাবেই পড়তে যেওনা, এটা তোমার কাছে একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের শেষ অনুরোধ রইল, কাকা হিসাবে যদি এতটুকুও সম্মান করেছো ভালবেসেছো, তাহলে ওগুলো পুড়িয়ে ফেলবে, আমি যে ভুল করেছি , তুমি সেটা করতে যেওনা বাবা, মায়ার কাননে একবার জড়িয়ে পড়লে জেনে রেখো মুক্তি নেই’।।
এই পর্যন্ত বলে থামলেন প্রফেসর সোম, ঘরে এসি চলছে, তাও দরদর করে ঘামছিলেন ভদ্রলোক । রুমাল বের করে ঘামটা মুছে নিলেন উনি।
- কাকার শেষ ইচ্ছে কে সম্মান করা আমার উচিৎ ছিল, ডায়রিটা পড়া আমার উচিৎ হয়নি, আসলে যৌবনের প্রাবল্য বুঝতেই পারছ,সেদিনের ক্ষণিকের গোঁয়ার্তুমির মূল্য চোকাতে হবে আমাকে সারাজীবন, বিড়বিড় করে উঠলেন প্রোফেসর ।।
হঠাৎ ওপরে কিসের চিৎকার শোনা গেলো, কেউ যেন প্রবল আক্রশে জিনিষপত্র ছুঁড়ে ফেলে দিলো, হন্তদন্ত হয়ে উঠলেন প্রফেসর,
- এক্সিউজ মি, তুমি একটু বস কৌশিক , আমি একটু ঘুরে আসছি ।।
দৌড়ে বেরিয়ে গেলেন উনি, আমি কিরকম একটা কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে বসে রইলাম ......।।
#পাঁচ
“আমার বাড়ির লোক, মেরীকে
মানিয়া নিতে পারে নাই,তাই দেশ হইতে ফিরিয়া আসিয়া, কে জানে একমাত্র উহার জন্যই সে
সর্বদা মনমরা হইয়া থাকিত কিনা,আসলে মেরী অনাথ,তাই আমার বাড়ীর মানুষদিগকে আপন করিয়া
লইতে চেয়েছিল সে, কিন্তু উহাদিগকেও বা দোষ দিই কি করিয়া, আমার ঐরকম ভাবে, কোনও
আগাম সংবাদ না দিয়া উহাকে লইয়া যাওয়া উচিৎ হয় নাই।
সেসব দুঃখ আমরা মানিয়া নিয়াছিলাম,দুটিতে মিলিয়া
আনন্দের সংসার সাজাইয়াছিলাম, ডাক্তার হিসাবে আমারও পসার বাড়িতে ছিল, কিন্তু
বিধাতাপুরুষের বোধকরি আমাদের এত সুখ সহ্য হইলনা, রাজরোগে মেরী আক্রান্ত হইল , আমি
ও আমার সিনিয়ররা মিলিয়া প্রান ঢালিয়া দিলাম, কিন্তু মেরী বাঁচিল না। মেরী ভিন্ন
আমার ইহজগতে আর কেও ছিল না, , কিছুই ভালো লাগিত না, ডাক্তারি ছাড়িয়া দিলাম, আমাদের
বাসাটাও ছাড়িয়া দিয়াছিলাম,আমার পাগলের মত অবস্থা দেখিয়া কেউ কেউ নূতন করিয়া বিবাহ
করিবার বিধান দিল, সেসব কানে না তুলিয়া আমি কান্ট্রিসাইডে একখানি ছোট্ট ঘর লইলাম,
সেইখানেই বৃদ্ধ স্যামুয়েলসের সাথে আলাপ, আমার অবস্থা দেখিয়া, অত্যন্ত দয়াপরবশ হইয়া
সে বুড়া আমাকে এক জিপসি মহিলার কাছে নিয়া যান, সব শুনিয়া সে কিছু পাউন্ডের বিনিময়ে
আমাকে কিছু উপায়ের কথা বলে সঙ্গে এই বলেও সাবধান করে যে প্রকৃতির বিরুদ্ধাচারন করা
মানুষের কর্তব্য নয়, আমি সেগুলি লিখিয়া নিই।
মেরী কে হারাইয়া, আমার
মাথার ঠিক ছিলনা, সে সাবধান বানী আমার কর্ণে প্রবেশ করেনাই, অনেক খোঁজ করিয়া অনেক
পুরাতন লাইব্রেরী ঘাঁটিয়া আমি কিছু পুস্তকের সন্ধান পাই, যেগুলি সেই জিপসি বুড়ির
দাবীকে সমর্থন জানায়, কিন্তু এখানে থাকিয়া ইহার প্রয়োগ করা আমার পক্ষে সম্ভবপর নয়,
ইহার জন্য ফাঁকা জনবিহীন জায়গার
প্রয়োজন”।।
ডায়রিটা পড়ে পুরো ব্যাপারটা
আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়, যে কাকা কেনও এত দূরে পাণ্ডব বর্জিত জায়গায় এই জমিদার
বাড়ী কিনতে গেলন, বাকি ডায়রিটা জুড়ে শুধু কাকা আর মেরীর পুনরায় মিলিত হওয়ার কথা,
যতই হোক গুরুজন,তাঁদের যৌনাচারের কথা পড়তে আর কার ভালো লাগে ।।
কিন্তু মেরীকে উনি ফিরে পেলেন কিভাবে , আর কিভাবেই বা এটা
সম্ভব,আমি বিস্ময়ে প্রশ্ন করি প্রফেসর সোমকে ।।
এক্সাক্টলি, এই এক প্রশ্ন আমার মনেও এসছিলো, বিজ্ঞানের ছাত্র আমি,
এগুলো সবই পত্নীবিয়োগে শোকে আচ্ছন্ন কাকার
মনগড়া কল্পনা বলেই চালিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি, পারিনি কারন ঐ বাকি
বইগুলো, এত সুন্দর ভাবে গুছিয়ে সব বর্ণনা করা ছিল সেখানে, যদিও ল্যাটিনে লেখা,
কিন্তু ও বিদ্যা আমার ছিল, তাই ভাবলাম একবার প্রয়োগ করাই যাক না। জিপসি মহিলার
সাবধানবানী কাকা শোনেন নি, আমিই বা কাকার কথা শুনবো কেন? বয়সের দোষ বুঝলে কিনা
ভায়া, অদম্য কৌতূহল,আর তখনই ঘটে গেল সেই সর্বনাশ ।।
কি সর্বনাশ ?
বলব ভায়া, তবে ডিনার করতে করতে, তুমি বস একটু কেমন, কইরে রমেন
ডিনারটা সার্ভ কর, আমি একটু ওপর থেকে আসছি ।।
উত্তেজনার ফানুসে চড়িয়ে, আবার চলে গেলেন প্রফেসর, কেন যে উনি
বারবার দোতলায় চলে জান কে জানে ...।।
#ছয়
নাহ আপনার কুকের কিন্তু
রান্নার হাতটি খাসা ।।
হা হা, আমার সাথে সারা দেশ ও ঘুরে বেড়িয়েছে ভায়া, হাত তো খুলবেই ।
তারপরে বলুন কি হল, কি সর্বনাশের কথা আপনি বলছিলেন ।
হ্যাঁ, তো হল কি , কাকার ডায়রি আর বইগুলো ঘেঁটে আমার বেশ একটা
অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় পেয়ে বসল, সবিস্তার বর্ণনায় যাচ্ছিনা, তবে ডায়রিতে লেখা
প্রসেস কিম্বা বইগুলোতে যেটা বলা হয়েছে সেটা হল, মৃত প্রিয়জনকে আহ্বান করা তো
সম্ভব কিন্তু তাঁদের আবার নিজের করে রক্ত-মাংসের শরীরে পাওয়া সম্ভব নয়।।
তবে ?
রোসো রোসো ভায়া, অত অস্থির হলে ঘটনার খেই হারিয়ে যায়,আমাদের
হিন্দুদের অঘোরীতন্ত্রে যেমন ডাকিনী-যোগিনীদের নামে শুনেছো,বিভিন্ন স্তরের শক্তি
এরা,তেমনি ওদের শাস্ত্রেও বিভিন্ন স্তরের ডেমনের কথা বলা হয়েছে, তেমনিই নিম্ন এক
স্তরের ডেমন হল Succubus,ওদের
তন্ত্রে এদের দেখানো হয়েছে সেক্স স্লেভ
হিসাবে, মানে বিভিন্ন শক্তি উপচারে এদের আবদ্ধ করে, নিজের যৌন বাসনা-কামনা
এদের দিয়ে পূর্ণ করা যায়, এবং শুধু তা নয় যে রূপে এদের কামনা করা হয়, সেই রুপেই
এরা ধরা দেয়, তবে হ্যাঁ এদের কন্ট্রোলে রাখতে হয়, নাহলেই ফল হয় মারাত্মক...... কি
এবারে কাকা আর মেরীর পুনর্মিলনের কেসটা বোঝা যাচ্ছে ?
হ্যাঁ বুঝতে পারছি , কিন্তু ......
হ্যাঁ, ঐ কিন্তু তেই আমিও আটকেছিলাম, বিজ্ঞানের জগতে এসব গাঁজাখুরি
আবার সম্ভব নাকি ? কিন্তু পরীক্ষা করে দেখতে অসুবিধা কোথায় তাইনা,প্রসিডিউরে এমন
কিচ্ছু ভয়ংকর উপকরণের কথাও বলা নেই যে সহজলভ্য নয়। এর মাঝখানে কিছু কাজ সেরে
রাখলাম, বাড়ী গেলাম গিয়ে ভুজুং ভাজুং দিলাম যে ওখানেই কাঠের ব্যাবসা শুরু করব,
আসলে সাত ভাইয়ের এক ভাই আমি, তাই বাড়ীর লোক খুব বেশী চাপ নেয়নি, যাকগে ফিরে এলাম
সব জিনিষপত্র নিয়ে যা যা লাগবে, বাকি রইল দুটো জিনিষ যেগুলো একমাত্র শম্ভু জোগাড়
করতে পারবে, দেশী মুরগীর নখওয়ালা ঠ্যাঙ আর একটা খুব অদ্ভুত জিনিষ শকুনের ডিম ।।
পেলেন ?
হ্যাঁ পেলাম আর কি , বেশ কিছু পয়সা গচ্চা দিয়ে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে
রাজি করলাম শম্ভুকে।
তারপর?
তারপর আর কি, কাকার ডায়রিতে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে পূর্ণিমা
তিথিতে সব উপকরণ দিয়ে ছাদে গিয়ে গোপনে সব উপচার সারলাম, সমস্যা হল একটা জায়গায়।
কিসের সমস্যা ?
কি আর বলব তুমি আমার থেকে অনেক ছোট, Succubus কে ডাকতে গেলে অনেক উপাচারের
মধ্যে আর একটা হল কারো মুখ তোমাকে স্মরণ করতে হবে, মানে যে রূপে তুমি Succubus
কে কাছে পেতে চাইছ আর কি । অস্বীকার করব না, কলেজে
পড়াকালীন একটি মেয়েকে বেশ পছন্দ ছিল,বেশ রাবিন্দ্রীক, কিন্তু এখকার মত
খুল্লমখুল্লা ব্যাপারটা তো ছিলনা, তাই কথা পর্যন্ত বলা হয়ে ওঠেনি কোনোদিনও, তাই
ভাবলাম ক্ষতি কি ।
সারারাত
আর কিছুই হলনা, ঘুম ভাঙল পরেরদিন, ভাবলাম সবই কাকার মনের ভুল, পুরোটাই ধাপ্পা,
খটকা লাগলো ধপধপে সাদা মার্বেলের মেঝেতে কাদা মাখা পায়ের ছাপ, হাঁক পাড়লাম
শম্ভুকে, শম্ভু জানালো সে এসেই বাগানে কাজ করতে লেগেছে, এ ঘরে সে আসেনি, আর কাদা
পায়ে আসার সাহসও তার হবার নয়, কিন্তু এগুলো তো মানুষেরই পায়ের ছাপ, ও মিথ্যে বলছে
নাতো ? নাকি চোর এসছিল, কিন্তু কিছু মিসিং ও নয়। যাকগে , সেই রাতেও আবার একবার
কাকার বলা প্রসিডিউর উপাচার সহযোগে সম্পূর্ণ করলাম । ঘুমিয়ে আছি তখন রাত কটা বাজে
খেয়াল নেই, হঠাৎ নাকে একটা তীব্র সুগন্ধ এলো,অনেকটা আগেকার দিনে মা-বউয়েরা মাথায়
একধরনের সুগন্ধি তেল মাখতেন সেরকম, মাথার কাছে টর্চ জ্বালবো কিনা ভাবছি, কিন্তু
তারপর যা হল, আর সাহস পেলাম না কিছু করার ।
কি হয়েছিল এমন ?
একটা খিলখিলিয়ে নারী কণ্ঠ ভেসে এল বুঝলে। “ আমাকে তো এইরুপেই
ছেয়েছিলে, তবে আজ ভয় পাচ্ছ কেন”? চোখ অন্ধকারে সইয়ে নিয়ে যা দেখলাম,তাতে আমার হাড়
হিম হয়ে গেল, কাকা মিথ্যে বলে যাননি, চাঁদের আলোয় মুখটা স্পস্ট বোঝা না
গেলেও,দেখলাম একটা নারী অবয়ব দাঁড়িয়ে আছে আমার বিছানা থেকে একটু দূরেই, একটু একটু
করে সে এগিয়ে এলো আমার দিকে,সেই মুখ সেই ঠোঁটের কাছের তিল সেই লম্বা কটিদেশ সেই
সুউচ্চ বুক আর সেই শরীর, আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম, ভয়ঙ্কর অথচ চরম সুন্দর, তারপরে
সারারাত আর কি হয়েছিলো সেই বিস্তারে যাচ্ছি না, শুধু এটা বলতে পারি,একটা হিংস্র
বাঘিনীর সাথে যেন আমাকে খাঁচাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিলো । ভোরে ঘুম ভাঙল, পাশের দিকে তাকালাম, কই
কেউ নেই সেখানে, তাহলে স্বপ্ন দেখলাম ? আয়নার দিকে চোখ পড়ল কেঁপে উঠলাম , আমার
সারা শরীর জুড়ে নখের দাগ, ভালোবাসার ।
তারপরেও আপনি পড়ে রইলেন ঐ বাড়িতে,পালিয়ে এলেন না?
ঐ যে কাকা বলেছিলেন মায়া কানন, হাড়ে হাড়ে টের পেলাম, এখনও অস্বীকার
করতে লজ্জা নেই, আমার জীবনের সব থেকে মধুরতমরাত গুলো কেটেছিল ওখানে,ওর নাম আমি
দিয়েছিলাম মায়া, সে রাতের আধারে আসত, ভোরের আগে চলে যেত, কথা কোনোদিন খুব বেশী হয়নি,
বলার সুযোগও দিতনা সে, রতিকলায় পারদর্শী ছিল সে, এভাবে কেটে গেলো এক মাস ,বাড়িতে
চিঠি পাঠানো বন্ধ, নবীন মাস্টারের সাথে আড্ডা বন্ধ, কাকার জমিগুলো সস্তায় বেচে দিতে
থাকলাম,সারাদিন শুধু বসে থাকতাম তার অপেক্ষায় ,কখন সে আসবে। হঠাৎ একদিন এক সকালে
শম্ভু এসে বলল যে এক পাদ্রী আমার সাথে দেখা করতে চায়, কিন্তু সে বাড়িতে প্রবেশ
করবেনা। ব্যাজার মুখে গেলাম দেখা করতে। মাঝবয়সী পাদ্রী
সাহেব, কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে
তাকিয়ে রইলেন “My Son এখনও সময় আছে, শয়তান কে হারিয়ে দেওয়ার, আমি
তোমার কাকাকেও বলেছিলাম, উনি পারেননি, কিন্তু তোমার মধ্যে সে Power আছে, তুমি পারো সে নরকের কীটকে নরকে ফেরত পাঠাতে”।
দুম করে মাথাটা গরম হয়ে গেল, যা তা কথা শুনিয়ে বসলাম ওনাকে, আসলে
বয়সটা তখন কম আর ওদিকে মায়ার আবেশে আমি আবিষ্ট, স্মিত হাসলেন পাদ্রী সাহেব, “আগুন
নিয়ে খেলছ তুমি বাবা, তোমার আনন্দ কিন্তু অন্যের কিন্তু অভিশাপ হয়ে আসতে পারে,
তোমার বাড়ীর বাম পাশ পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা
গেছে, ওটা দিয়ে কিছুটা গেলেই আমার ঘর, যদি কোনোদিন অসুবিধেয় পড়ো,আসতে দ্বিধা
করোনা,ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন ”, চলে গেলেন উনি ।।
সেই রাতে মায়া প্রথম
অন্যধরনের কথা বলল, “কি করতে এসেছিলো ঐ বুড়োটা”, মায়াকে ভয় পাওয়া অনেকদিন আগেই
ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি, সে যে একটা বিদেহী এই জ্ঞান আমার চলে গেছিলো, আসলে একটা মানুষ
রক্ত-মাংসের মানুষ, যাকে প্রতি রাতে আমি নিজের করে পাই, তাকে ভয় পেতে যাবো কেন?
কিন্তু এই প্রথমবার
পাদ্রীকে নিয়ে কথা বলার সময় মায়ার চোখ দেখে অস্বস্তি লাগলো আমার ।
তারপর ?
উঁহু, ডিনার শেষ, তুমি হাত
ধুয়ে ফেল , বাকিটা একটা কড়া করে ব্ল্যাক কফি খেতে খেতে বলব ।
আপনি নিশ্চয় আবার উপরে
যাবেন? কেউ কি আছে উপরে? , আমি আর থাকতে না পেরে জিগ্যেস করেই ফেললাম।
বলব, নিশ্চয় বলব, তবে ঐ কফি
আসার পরই, স্মিত হেসে চলে গেলেন প্রফেসর সোম।
আমিও হাত ধুয়ে স্টাডি রুমের
সোফায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম, মনে অনেক প্রশ্নের ভিড়।
#সাত
কিন্তু সব ভালো জিনিষেরই তো
একটা শেষ থাকে, আর সেটা যদি অতিপ্রাকৃতিক হয়, তাহলে তার শেষটা মধুর হয়না,একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লেন
প্রফেসর সোম, কই কফিটা তুলে নাও, ঠাণ্ডা হয়ে যাবে যে ।।
হ্যাঁ এই নিচ্ছি, তারপর কি
হল ?
বেশ চলছিল বুঝলে, হঠাৎ
একদিন সকালে একজনকে নিয়ে হাজির নবীন মাস্টার, দেখলাম অবিনাশ ।
কে অবিনাশ?
অবিনাশ আমার স্কুলের বন্ধু,
খুব ক্লোজড ছিলাম, আসলে বাপ মা মরা অনাথ ছেলে , মামারবাড়িতে লাঠি ঝ্যাটা খেয়ে পড়ে
থাকত, তাই বড়লোকের বাড়ীর ছেলে হয়ে বেশ মায়া পড়ে গেছিলো ওর ওপরে, কলেজে থাকাকালীনও
অনেকবার গেছি ওর মামার মুদির দোকানে,ওখানেই ও কাজ করত, পরে আর যোগাযোগ থাকেনি।
এরকম হুঠ করে চলে আশায় বেশ
বিরক্তই হলাম, যদিও মুখে প্রকাশ করলাম না, কথায় কথায় নবীন মাস্টার জানালো যে
অবিনাশ কাল রাতেই এসেছে, কিন্তু আমার বন্ধু তাই রাতে আতিথ্যটুকু গ্রহণ না করিয়ে
উনি ছাড়েননি অবিনাশকে, যাই হোক চা-জলখাবার খাইয়ে বিদায় দিলাম নবীন মাস্টারকে।
এবারে পড়লাম অবিনাশ কে
নিয়ে, ভেতরের রাগটা যথাসম্ভব চেপে জিজ্ঞেস করলাম, “তা কি ভাই হঠাৎ কি মনে করে,
আসবার আগে একটা খবর তো দিতে হয়”।
খপ করে হাতদুটো চেপে ধরল
অবিনাশ, “ভাই জানি কাজটা খুব অন্যায় হয়ে গেছে, তুমি অনেকদিন আর মামার দোকানে আসনা,
তোমার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তুমি এখানে, কিসের নতুন ব্যাবসা চালু
করেছো, মা কালীর দিব্যি কেটে বলছি ভাই, মামার ওখানে আর পারছিলুম না, দুবেলা গাধার
মত খেটেও যদি দুটো খেতে না দেয় কিভাবে থাকি বলোতো, তোমার তো নতুন ব্যাবসায় অন্তত
একটা চাকরের দরকার পড়বে ,আমাকে না হয় সেই চাকরীটাই দিও,টাকা পয়সা লাগবেনা দুটি
খেতে দিও তাইলেই হবে ,কিন্তু দোহাই আমাকে আর তাড়িয়ে দিও না বন্ধু”।
খুব খারাপ লাগলো, ছি ছি
ছোটবেলার বন্ধুর সাথে কি ব্যাবহার করছি, কি অধঃপতনই না হয়েছে আমার,বললাম, “আরে ছি
ছি সে কথা আসছে কেন, আমি কি তোমাকে চলে যেতে বলেছি, থাকোনা নিজের বাড়ী মনে করে”,
মুখে বললাম বটে, তবে মনে মনে স্থির করলাম, দরকার পড়লে হাতে বেশ কিছু টাকা দিয়ে
হলেও ওকে কিছুদিনের মধ্যেই ওকে বিদায় করতে হবে, মায়ার ব্যাপারে ও যেন কিছু জানতে
না পারে।
তোমার ব্যাবসার তো কিছু
দেকছি না ভায়া, আপিস কি দূরে কোথাও।
সব দেখবে, এইতো সবে এলে,
একটু জিরিয়ে নাও, এই শম্ভু দাদাবাবাকে নাইবার জল এনে দে , তারপরে জমিয়ে
খাওয়া-দাওয়া সারা যাবে ।
#আট
সে রাতে মায়াকে কিছু বলার আগেই সে প্রশ্ন করল।
ওটা কে গো ?
কোনটা ?
ন্যাকা, ওই যে নীচের তলার
ঘরে যাকে ঠাই দিয়েছ।
ওটা আমার বাল্যবন্ধু,
তোমাকে ওটাই বলতে যাচ্ছিলাম, একটা অনুরোধ আছে তোমার কাছে।
অনুরোধ কেন আদেশ বলো ।
তুমি কিন্তু ওই বেচারিকে ভয়
দেখিও না, ওর কাছে যেও না ।
আমি কেন যাবো, আমি তো শুধু
তোমার, বলেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে মায়া , আমাকে আরও শক্ত করে জাপটে নেয় নিজের শরীরের
সাথে ।।
পরেরদিন সকালে অবিনাশের
সাথে জলখাবারের টেবিলে দেখা, কিছুটা অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল তাকে ।।
কি ব্যপার বন্ধু, মুখ চোখ
শুকনো কেন? নতুন জায়গায় কাল রাতে ঘুম হয়নি বুঝি ?
না তা নয় ব্যাপারটা, আসলে
তোমাকে যে কিভাবে বলি বুঝতে পারছিনা ।।
আরে নিসংকোচে বল ।।
দেখ ভায়া, মানে তুমি
বড়লোকের ছেলে তোমার কিছু খেয়াল খুশী থাকতেই পারে, কিন্তু আমি, গরীব ব্রাম্ভনের
সন্তান,নিজের আত্মমর্যাদা ছাড়া, আমার আর কিছু নেই, আমাকে তোমার এই খেলায় অনুগ্রহ
করে অংশ নিতে বোলো না, ওনাকে বারণ করে দিও ।।
বুঝলাম, ঘটনাটা কোনদিকে
গড়িয়েছে , মায়াকে এত বারণ করার পরেও সে অবিনাশের ঘরে গেছে এবং শুধু যায়ই নি তাকে
আবার রতিক্রীড়ায় আহ্বান জানিয়েছে ,শরীরে এত ক্ষুধা তার? আজ উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে
তাকে,কিন্তু না, মাথা ঠাণ্ডা করে এগতে হবে, আসলে মায়া যে রক্ত মাংসের মানুষ না
সেটা বারবার ভুলে যাই আমি ।।
#নয়
মায়া শুয়ে আছে পাশে,
আলো-আঁধারিতে তার শরীরের গোপন বিভাজিকাগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে,বাঁধভাঙা
উচ্ছ্বাসের সব গোপন উপত্যকা এক-একটা ।।
আচ্ছা আমি যে তোমাকে বারন
করলাম, তাও তুমি কেন গেলে অবিনাশের কাছে ?
কেন আমি কাছে গেলে কি সে
অপবিত্র হয়ে যাবে ?
সেটা নয় মায়া, কিন্তু সবার সব
জিনিষটা নাও ভালো লাগতে পারে।
হঠাৎ করে আমার দুটো হাত ধরে
নিজের নরম বুকে টেনে নিলো মায়া, দিয়ে হিসহিসিয়ে প্রশ্ন করল, তুমি কি বলতে চাও কোনও
পুরুষমানুষের সাধ্য আছে এই শরীরটা অস্বীকার করার ?
অবিনাশ তো তোমায় ভালবাসেনি,
বেসেছি আমি, তুমি কেন তাহলে যাবে তার কাছে ?
তুমি বড্ড সহজে নিজেকে
আত্ম-সমর্পণ করে দাও, আর সে যে বড্ড প্রাতিবাদী, শক্ত পুরুষ।
ঝাঁ করে মাথাটা গরম হয়ে
গেলো,আর ভুলটা করে বসলাম।
বেশ্যা মেয়েছেলে, তোর এত
শরীরের ক্ষুধা , মনে রাখিস যে নরক থেকে তোকে তুলে এনেছিলাম,সেখানে এই মুহূর্তে
ফেরত পাঠিয়ে দিতে পারি তোকে ।।
যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেলো,
আগুন চোখা দৃষ্টিতে সে নীরবে তাকিয়ে রইল আমার দিকে, সে ভয়ংকর চোখ আমি এর আগে
দেখিনি, সে যে মানুষ নয়, রক্তমাংসের এক কায়া, এই প্রথমবার আমি বুঝতে পারলাম, আমি
আর তাকিয়ে থাকতে পারলাম না চোখ বুজে ফেললাম।
কতক্ষণ কেটে গেছে জানিনা,ওভাবেই
পড়ে ছিলাম কুণ্ডলী পাকিয়ে, হঠাৎ এক তীব্র আর্তনাদে সে রাতের নিস্তব্ধতা খানখান হয়ে
ভেঙে পড়ল।
মনে পড়ল এ গলা অবিনাশের,
ঘরে দেখলাম মায়া নেই, ছুটে গেলাম নীচের তলায় অবিনাশের ঘরের দিকে, কিন্তু ততক্ষণে
যা হওয়ার হয়ে গেছে, ঘরের দরজা বন্ধ, ভেতর থেকে মায়ার ভয়ংকর হাসি আর অবিনাশের
আর্তনাদ ভেসে আসছে, সে যেন এক ক্ষুধার্ত বাঘিনীর খাঁচায় বাঁধা পড়েছে, দরজায়
হাতড়াতে থাকলাম।
অবিনাশ অবিনাশ, মায়া ওকে
ছেড়ে দাও, তোমার হিসাব আমার সাথে, আমি অপরাধের সাজা নিতে প্রস্তুত, ওকে ছেড়ে দাও।
কিন্তু বৃথা চেষ্টা, আগেকার দিনের মোটা সেগুনের
দরজা, ধাক্কা দিয়ে আমার কাঁধ ছড়ে গেলো, কিন্তু পাল্লা এক চুলও নড়লনা, ভেতরের
চিৎকারটা ক্রমশ গোঙানিতে পরিণত হল, আমি কি করতে পারি, এই নির্জন পুরীতে কে এই রাতে
আমাকে সাহায্য করতে আসবে, “তোমার আনন্দটা অন্য লোকের অভিশাপ হয়ে দাঁড়াতে পারে”,
পাদ্রী সাহেবের কথাটা আবার কানে বাজলো , হ্যাজাকটা নিয়ে ছুট লাগালাম সেই জঙ্গলের
পথ ধরে , এলোপাথাড়ি দৌড়ে গাছের ডাল-কাঁটা- পাথরে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে লাগলো আমার
শরীর, মাথায় একটাই চিন্তা অবিনাশকে যে করে হোক মায়ার হাত থেকে বাঁচাতে হবে, দূর
থেকে একটা চার্চ মত দেখতে পেলাম যেন, পাগলের মত এগিয়ে গেলাম,চার্চের পাশেই একটা
ছোট ঘর, তার দরজায় গিয়ে উন্মাদের মত বাড়ি মারতে লাগলাম, ফাদার ফাদার আপনি কোথায় ,
দরজাটা বোধহয় একটু ফাঁক হল, আলো হাতে এক বৃদ্ধকে বেরিয়ে আসতে দেখলাম মনে হয়, আমি
আর পারলাম না, মাথা অনেকক্ষণ আগেই কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল, এবারে শরীরও বুঝি
জবাব দিল, আমার বন্ধুকে বাঁচান ফাদার ও মায়াকাননে একা, চিৎকার করেই অবশ হয়ে হুমড়ি
খেয়ে ওখানেই পড়ে গেলাম আমি ।।
- তারপর, তারপর কি হল?
ফাদার গেলেন মায়াকাননে? অবিনাশ বাবুরই বা কি হলো ?
তারপরে সে রাতে এক্সাক্টলি
কি হয়েছিলো সত্যিই আমি তা আজও জানিনা, কিছু আবছা আবছা খন্ডচিত্র মনে পড়ে। যেমন
ফাদারের কাঁধে ভর দিয়ে আমি মায়াকাননে ফিরে এসেছিলাম।
এখনও কানে বাজে, ফাদারের
সেই চিৎকার, “সোম একমাত্র তুমিই পারবে ওকে নিজের জায়গায় ফিরিয়ে দিতে”।
শরীরের শেষ শক্তিবিন্দু
দিয়ে আমি চিৎকার করে উঠেছিলাম, মায়া, নরকের
কীট,বেশ্যা তোকে আমি আদেশ করছি, দরজা খোল ,অবিনাশকে ছেড়ে দে।
সদর দরজাটা খুলে গেছিল, সে
বেরিয়ে এসেছিল ধীরে ধীরে, সম্পূর্ন উলঙ্গ শরীরে। তার যে
অনন্য রূপে এতকাল মজে রয়েছিলাম, তা একটু একটু
করে খসে পড়ছিল, সেখানে জায়গা নিচ্ছিল থাক থাক গলা পচা মাংস। তার যে চোখে এতকাল
সমুদ্রের নীল দেখতে পেতাম, আজ সেখানে স্থান পেয়েছে শ্মশানের নীরবতা। তার যে বুকের
গভীরে শান্তি খুঁজে পেতাম, আজ সেখানে থেকে চুইয়ে চুইয়ে নেমে আসছে তাজা রক্তের
ধারা। সে রক্ত কার, তা বুঝতে আমার দেরী হয়নি। এ দৃশ্য আমি আর নিতে পারিনি, আমি
ওখানেই জ্ঞান হারাই। ব্যাস, সে রাতের নলেজ আমার এইটুকুই। এরপরে
কি হয়েছিল, ফাদার কিভাবে আমাকে উদ্ধার
করেছিলেন ইত্যাদি বিষয়ে ফাদার আমাকে কোনোদিন কিছু আর বলেন নি। আর আমি জোরও করিনি,
কারন সেই অভিশপ্ত রাতের কথা আমি আর মনেও করতে চাইনি।
পরেরদিন যখন জ্ঞান ফিরেছিল, আমি নিজেকে অক্ষত
শরীরে এক মিশনারি হাসপাতালের নরম বিছানায় আমি খুঁজে পেয়েছিলাম আর প্রতিটা মুহূর্তে
নিজেকে অভিশাপ দিয়েছিলাম অবিনাশের পরিণতির জন্য, আত্মহত্যাও করতে গেছিলাম জানো,
কিন্তু বাধা দিয়েছিলেন ফাদার, বলেছিলেন, “আমি সেদিন ছিলাম বলে তোমাকে সাহায্য
করেছিলাম, কিন্তু আমার বয়স হয়েছে, শয়তানের সাথে লড়াইয়ের সৈনিকদের সংখ্যা সত্যিই
খুব কম, তুমি আসবে আমাদের এ সংগ্রামে? দেখ অবিনাশের পরিণতির জন্য তুমি দায়ী এ কথা
ঠিক, কিন্তু সেই আফসোস, সেই অভিশাপটাকে কাজে লাগিয়ে যদি আর ৫ টা মানুষের উপকার করা
যায়, তুমি করবেনা” ?
তাহলে উত্তর পেলে তো কৌশিক, কেন আমার এই ‘লাইনে’
আসা, কফির কাপটা নামিয়ে স্মিত হাসলেন হাসলেন প্রোফেসর।।
হঠাৎ ওপর থেকে বাসনপত্র
ছুঁড়ে ফেলার আওয়াজ এলো।
- চলো আমার সাথে ওপরে
কৌশিক।
উপরে উঠে দেখলাম খাবারের
বাসনপত্র চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে আছে, সেগুলো গুছিয়ে তুলছে সেই অল্পবয়সী ছেলেটা , আর
বিছানায় ওটা কি?
প্রায় বিছানায় মিশে যাওয়া
একটা শরীর,অতি কষ্টে একটা হাত নেড়ে যেন কিছু বলতে চাইছে, এগিয়ে গেলেন প্রফেসর
সোম,বললেন, “ শরীরের বাম দিকটা পুরো প্যারালাইসিসে অবশ,কথা বলতে পারেনা, তবু
বাড়িতে লোক এলে ওনাকে আলাপ করাতে হবেই, না হলেই ভয়ংকর রেগে যান ভদ্রলোক, এস কৌশিক
আলাপ করিয়ে দি,ইনি আমার বন্ধু অবিনাশ”।
উত্তেজনার চোটে কখন হাত
আলগা হয়ে গেছে খেয়াল ছিলনা, কফির মাগটা আছড়ে পড়ল মেঝের ওপর, ভাঙা টুকরো গুলো বিকটা
আওয়াজ করে ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে...............।।
2 comments
The Real Star Casino (Google Play) - Videodl.cc
ReplyDeleteThe Real Star Casino (Google Play). $50.00 USD CAD + 25 Free Spins videodl (only 1x wagering) - $75.00 USD + 25 Free Spins (only 1x wagering).
The best casino games at MD.com
ReplyDeleteSlot machines, jackpots, roulette, slots 천안 출장마사지 and video poker machines. Play 동두천 출장마사지 the 파주 출장마사지 slots, jackpots, and video poker games 여수 출장마사지 and 충주 출장안마 win real money at MD.com.